নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে (রবিবার) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তিনটি কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি এবং রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড—এই তিন কোম্পানির শেয়ার মূল্য দিনে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায় (Upper Circuit Breaker)। ফলে, দিন শেষে এসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রেতাশূন্য ছিল।
তবে এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে থাকা কারণ ও কোম্পানিগুলোর মৌলিক অবস্থান একরকম নয়। নিচে প্রতিটির বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো—
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড: মৌলিক ভিত্তিতে মূল্যায়নযোগ্য বৃদ্ধি
দাম বৃদ্ধি: ১০.০০%
সমাপনী দর: ৭.৭০ টাকা
ক্যাটাগরি: ‘বি’ (ব্যাংক খাত)
আর্থিক সূচক:
EPS: ০.৬০ টাকা
NAV: ১৬.৭৮ টাকা
P/E অনুপাত: ১২.৮৩
প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোল্ডিং: ৩১.৭৪%
মূল্যায়ন:
বর্তমান শেয়ার মূল্য এবং নিট সম্পদ মূল্যের তুলনায় কোম্পানিটি এখনো তুলনামূলকভাবে মূল্যায়নযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে। শেয়ার প্রতি আয় এবং পি/ই অনুপাত নির্দেশ করে যে, এটি অতি মূল্যায়িত নয়। প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণের হারও স্থিতিশীলতা ও আস্থার ইঙ্গিত দেয়।
বিনিয়োগ দৃষ্টিকোণ:
ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে খাতভিত্তিক ঝুঁকিও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি: মৌলিক ভিত্তিতে শক্তিশালী অবস্থান
দাম বৃদ্ধি: ৯.৯৯%
সমাপনী দর: ১৪৯.৮০ টাকা
ক্যাটাগরি: ‘এ’ (টেলিকম খাত)
আর্থিক সূচক:
EPS: ৯.৯৯ টাকা
P/E অনুপাত: ১৪.৯৯
সরকারি শেয়ার: ৭৬.৯৩%
ঘোষিত লভ্যাংশ (২০২৪): ৪০% নগদ
মূল্যায়ন:
এটি একটি ব্লু-চিপ কোম্পানি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল আর্থিক ফলাফল প্রদর্শন করছে। সরকারি মালিকানার উচ্চ হার বিনিয়োগে একটি নির্ভরযোগ্যতার উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। সাম্প্রতিক লভ্যাংশ নীতি কোম্পানির নগদ প্রবাহের সক্ষমতাও প্রতিফলিত করে।
বিনিয়োগ দৃষ্টিকোণ:
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বিকল্প। মৌলিক ভিত্তি শক্তিশালী এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত হওয়ায় এটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হতে পারে।
রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড: অস্বচ্ছ তথ্য এবং আর্থিক দুর্বলতা
দাম বৃদ্ধি: ৮.৫৭%
সমাপনী দর: ৩.৮০ টাকা
ক্যাটাগরি: ‘জেড’ (টেক্সটাইল খাত)
আর্থিক সূচক:
EPS: -১.৬২ টাকা (নেতিবাচক)
P/E অনুপাত: নেতিবাচক
তথ্য হালনাগাদ: শেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন ২০১৯-২০২১ সালের
মূল্যায়ন:
এই কোম্পানির বর্তমান আর্থিক তথ্য পুরোনো এবং অপর্যাপ্ত, যা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। নেতিবাচক আয় এবং 'জেড' ক্যাটাগরির অবস্থান কোম্পানিটির উপর আস্থা কমিয়ে দেয়। AGM না করা এবং লভ্যাংশ না দেওয়া এটিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
বিনিয়োগ দৃষ্টিকোণ:
মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও কোম্পানিটির আর্থিক ভিত্তি দুর্বল এবং তথ্য স্বচ্ছ নয়। গুজব বা বাজারে অপ্রমাণিত আশার ওপর ভিত্তি করে এমন শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
আজকের বাজারের পারফরম্যান্স থেকে বোঝা যায়, মূল্যবৃদ্ধি সবসময় মৌলিক শক্তির প্রতিফলন নয়।
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস একটি শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানি, যেখানে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে ফলদায়ক হতে পারে।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনায় আগ্রহ তৈরি করেছে, তবে আরও বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
রিজেন্ট টেক্সটাইল এর ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগে সতর্কতা ও যথাযথ যাচাই জরুরি।
শুধু দাম বৃদ্ধির ভিত্তিতে বিনিয়োগ না করে কোম্পানির হালনাগাদ আর্থিক তথ্য, খাতের অবস্থা এবং কৌশলগত পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
মো: জাহিদ/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইতে চাহিদার কেন্দ্রে তিন কোম্পানি
- আপলোড সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৩:৫৯:২৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৩:৫৯:২৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ